বাড়ি কিংবা রাস্তা নয়, ভূতের দেখা মেলে রাজপ্রাসাদেও। হ্যাম্পটন ফোর্ট
প্রাসাদে দেখা দেন রাজা অষ্টম হেনরি, তার ছয়জন স্ত্রীকে নিয়ে। এদের মধ্যে
অ্যান বোলিন ও জেন সিমুরকে হত্যা করা হয়েছিল শিরশ্ছেদের মাধ্যমে। মুণ্ডহীন
অবস্থাতেই ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় তাদের ছায়াশরীর। তবে ভূতের সংখ্যায় সব
কিছুকে ছাড়িয়ে গেছে টাওয়ার অব লন্ডন। অ্যান বোলিনের আত্দা নাকি উদয় হয়
এখানেও। সেই সঙ্গে দেখা মেলে টমাস বেকেট, স্যার ওয়াল্টার র্যালে, লেডি জেন
গ্রে'র ভূতের। সলিসবারির অষ্টম কাউন্টসের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছিল
এখানেই। সেই ঘটনা রাতে এখনো দেখা যায় এখানে। একটি ভল্লুককেও নাকি দেখা গেছে
টাওয়ারের সিঁড়ি দিয়ে নামতে। রাতের পাহারাদার সেই ভল্লুককে বন্দুকের বেয়নেট
দিয়ে আঘাত করলে, তার ছায়াশরীর ভেদ করে যায় বেয়নেট এবং সঙ্গে সঙ্গে অদৃশ্য
হয়ে যায় সেই ভল্লুকও। উইনচেস্টার ম্যানশনের বদ্ধ রান্নাঘর থেকে আজও নাকি
ভেসে আসে খাবারের গন্ধ, বদ্ধ রুমের ভেতরে বসে কেউ যেন অর্গান বাজায়। পাওয়া
যায় মানুষের হেঁটে চলে বেড়ানো আর নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ।
সাদা বাড়ির কালো ভূত
ওয়াশিংটন ডিসির ১৬০০ পেনসিলভেনিয়া এভিনিউর 'হোয়াইট হাউস' শীর্ষক বাড়িটি
কেবল আমেরিকার বর্তমান প্রেসিডেন্টের বাসভবনই নয়, এটি একটি ঐতিহাসিক ভবনও
বটে। এমন একটি ভবনে যখন ভূত-প্রেতরা আস্তানা গাড়ে তাহলে কেমন হয়? বিশ্বমোড়ল
আমেরিকা যখন আধুনিকতার মোড়কে ডিজিটাল বিশ্ব গড়ার নেতৃত্ব দিচ্ছে তখন তাদের
প্রেসিডেন্টের বাসভবনে ঘুরে বেড়াচ্ছে ডজনখানেক প্রেতাত্দা! এমন বিশ্বাস
কেবল ভৌতিক গল্পপ্রিয় সাধারণ আমেরিকানদেরই নয়, হোয়াইট হাউসের একাধিক সাবেক
কর্মকর্তা-কর্মচারীও নিজেদের এসব ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বলে দাবি করেন।
হোয়াইট হাউসের পুব দিকের একটি কক্ষে প্রায়ই কাজে ব্যস্ত থাকেন হোয়াইট
হাউসের প্রথম ফার্স্ট লেডি এবিগেইল অ্যাডামসের ভূত। আবার মরার পরও বাগানে
কাজ করে যাচ্ছেন হোয়াইট হাউসের কর্মচারী ডলি ম্যাডিসন। শুধু তারাই নন,
আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আবরাহাম লিঙ্কন, রুজভেল্ট, হ্যারিসন,
রিগ্যান, অ্যান্ড্রু জ্যাকসনসহ আরও অনেকের প্রেতাত্দা এখনো দিব্যি ঘুরে
বেড়ায় হোয়াইট হাউসে।
হোয়াইট হাউসের প্রাক্তন কর্মচারীদের অনেকেই বলেছেন, বাড়িটি সাবেক
প্রেসিডেন্ট এবং এখানকার সাবেক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রেতাত্দা দিয়ে ভরা।
সাবেক প্রেসিডেন্ট হ্যারিসনের আত্দাটি বিভিন্ন সময় চিলেকোঠার জিনিসপত্র
তছনছ করে কী যেন খুঁজত। প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের ভূতকে প্রায়ই তার
শয়নকক্ষে দেখা যেত। আবার ফার্স্ট লেডি এবিগেইল অ্যাডামসকে প্রায়ই হলওয়েতে
ভাসতে দেখা যেত।
হোয়াইট হাউসে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় প্রেসিডেন্ট আবরাহাম লিঙ্কনের ভূতকে।
মিসেস ম্যারি টড লিঙ্কন স্বামীর প্রেসিডেন্সির সময়ই পুত্র উইলিকে হারান।
হোয়াইট হাউসের গ্রিন রুমে বসে মৃত পুত্রের সঙ্গে প্ল্যানচেটের মাধ্যমে
মাঝেমধ্যে যোগাযোগের চেষ্টা করতেন। স্বামীর গুপ্তহত্যার পরও তিনি একই
চেষ্টা করেছেন। পরবর্তীকালে তিনি বোস্টনের এক ভাস্কর 'মামলার'-এর স্টুডিওতে
গিয়েছিলেন। কথিত আছে, এ মামলার মৃত ব্যক্তিদের অশরীরী অস্তিত্বের ছবি
পাথরে খোদাই করতে পারত। ম্যারি মামলারকে দিয়ে এমন একটি ছবি খোদাই
করিয়েছিলেন। এখানে ছাপা হওয়া ছবিতে ম্যারির কাঁধে যে আবছা হাতের অস্তিত্ব
দেখা যাচ্ছে সেটি আবরাহাম লিঙ্কনের প্রেতাত্দার। হোয়াইট হাউসের ভূত
কাহিনীতে একটি বিষয় লক্ষণীয়, তা হচ্ছে এখানকার কোনো ভূতই আশ্চর্যজনকভাবে
কারও কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা করেনি। ভূতপ্রিয় আমেরিকানদের কাছে এগুলো
বিশ্বাসযোগ্য কিংবদন্তিতুল্য ভৌতিক ঘটনা হলেও অনেকের কাছেই এগুলো গালগল্প
ছাড়া আর কিছুই নয়।
দ্যা মোর হাউস
দ্যমোর হাউস নামে পরিচিত এই বাড়িতে ১৯১২ সালে একসঙ্গে আটজনকে খুন করা হয়।
খুন করার পদ্ধতিটাও ছিল ভয়ানক। প্রত্যেকের মাথায় একটি করে কুঠার ঢুকিয়ে
দেওয়া হয়। নিহতদের মধ্যে ছিলেন জসিয়াহ বি মোর, তার স্ত্রী সারা, তাদের
সন্তান হারমান, ক্যাথরিন, ভয়েড এবং পল। আরও ছিলেন তাদের বাসায় বেড়াতে আসা
দুজন মেহমান। এর পর থেকে এ বাড়িতে নানা রকম প্যারানরমাল ব্যাপার ঘটার নোটিস
পাওয়া গেছে। বেশির ভাগ মানুষের কথা অনুযায়ী ভুতুড়ে ব্যাপারগুলো হলো :
বাড়িটি থেকে রাতের বেলা বাচ্চাদের আওয়াজ পাওয়া যায়। কারা যেন রাতের বেলা
বাড়িজুড়ে দৌড়ে বেড়ায়। বাড়ির ভেতর থেকে গভীর রাতে ট্রেন যাওয়ার মতো আওয়াজ
পাওয়া যায়। যদিও বাড়িটি রেললাইন থেকে বহু দূরে। ধারণা করা হয়, খুনি যখন সেই
আটজনকে মেরেছিল তখন তাদের মরণ চিৎকার ঢাকার জন্য খুনি কোনোভাবে ট্রেনের
শব্দ তৈরি করেছিল। সে সময় মি. মোরের সন্তানেরা ছোট ছিল, তাই হয়তো বাড়িতে
পাওয়া যাওয়া সেই বাচ্চাদের দৌড়ানোর আওয়াজ তাদের পায়ের হতে পারে। অতৃপ্ত
আত্দা, যা আটকা পড়ে আছে
এখনো সেই বাড়িতে। খুনি কে ছিল সে সম্পর্কে আজ পর্যন্ত কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
উইন্ডসর ক্যাসেলে রানী এলিজাবেথ
বিখ্যাত উইন্ডসর ক্যাসেলে নাকি এখনো ঘুরে বেড়ান প্রথম এলিজাবেথ। প্রথম
হাইহিল জুতার আওয়াজ পাওয়া যায়। তার পরই দেখা যায় তাকে। রয়্যাল লাইব্রেরির
পাশ দিয়ে হেঁটে ভেতরের ঘরে ঢুকে যান। ওখানে যারা গেছেন, তাদের সবারই নাকি এ
রকম অভিজ্ঞতা হয়েছে।
র্যালেখিন হাউস
স্কটল্যান্ডের র্যালেখিন হাউসের ভূতের কীর্তিকলাপ ছিল সাংঘাতিক। কিন্তু সব
জেনেশুনেই টমাস হেডেন দুই ছেলে টম আর রবিন ও তার স্ত্রীকে নিয়ে বাড়িটা কিনে
থাকতে শুরু করলেন। প্রথম রাত থেকেই শুরু হলো প্রেতাত্দার উৎপাত। প্রচণ্ড
গরম ছিল সেদিন। মাঝরাতে কোথা থেকে হঠাৎ শৈত্যপ্রবাহ শুরু হলো। শোনা গেল
কারা যেন কথা বলছে, সিঁড়িতে পায়ের শব্দ, দুমদাম আওয়াজ। ভয়ে রবিন অজ্ঞান হয়ে
গেল। এর পর ঢংঢং করে ঘণ্টা বাজতে শুরু করল। পর মুহূর্তে দরজায় জোরে জোরে
ধাক্কার শব্দ। দরজা-জানালা নিজে নিজে খুলে যাচ্ছে। সারা বাড়িতে কাদের যেন
শ্বাসপ্রশ্বাসের শব্দ শোনা যেতে লাগল। একসময় ভয়ে বাড়ির সবাই অজ্ঞান হয়
গেলেন। পর দিন সাইকিক সোসাইটর সদস্যরা পুলিশ নিয়ে সারা রাত কাটালেন ওই
বাড়িতে।
অদ্ভুতুড়ে
ভারতের রাজস্থানের বেনগার দুর্গকে রীতিমতো সরকারিভাবে ভুতুড়ে বলে ঘোষণা
দেওয়া হয়েছে। পৌরাণিক মতাদর্শানুযায়ী, রানী রত্নাবালী এবং রাজা সিংশ্রিয়ার
মধ্যে এক তুমুল তান্ত্রিক যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল এখানে এবং
রাজা সে যুদ্ধে পরাজয় বহনপূর্বক মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু তিনি মৃত্যুর আগে
অভিশাপ দিয়ে যান, যে ব্যক্তি সূর্যোদয় হওয়ার আগে এবং সূর্যাস্ত যাওয়ার পড়ে
এখানে অবস্থান করবে তার মৃত্যু হবে। সম্প্রতি আর্কিওলোজিক্যাল
সার্ভে অব ইন্ডিয়া স্থানটিকে 'হন্টেড' বা ভুতুড়ে ঘোষণা করেছে।
প্যারিসের ক্যাটাকম্ব জাদুঘরটি মূল শহরের মাটির নিচে একটি টানেল আকারে গড়ে
তোলা। প্রায় ৬০ লাখ মানব কঙ্কাল দিয়ে এটি গড়ে তোলা হয়েছে। শোনা যায়,
মৃতদের আত্দা নাকি এই টানেলে প্রায়ই দৃশ্যমান হয়।
থাইল্যান্ডে একটা ১৮ তলা এপার্টমেন্ট আছে। এ এপার্টমেন্টে থাকা বেশির ভাগ
মানুষ হলো বিভিন্ন দেশ থেকে থাইল্যান্ডে পড়তে আসা স্টুডেন্ট। এই
এপার্টমেন্টে এ পর্যন্ত ৬টি আত্দহত্যার ঘটনা ঘটেছে। যারা আত্দহত্যা করেছেন
তারা সবাই স্টুডেন্ট আর এর মাঝে সবাই এপার্টমেন্ট থেকে লাফ দিয়ে আত্দহত্যা
করেছেন। এই এপার্টমেন্টে কয়েকটা ফ্ল্যাট আছে যেগুলোর রুমে প্রায় ২৪ ঘণ্টাই
ফিসফিস করে কথা বলার আওয়াজ শুনতে পায় সেই ফ্ল্যাটে বসবাসকারী স্টুডেন্টরা।
অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে খ্রিস্টানদের একটা পুরনো কবরস্থান আছে। সেটার পাশ
দিয়ে যাওয়ার সময় কেউ বেখেয়ালে ভেতরে তাকালে শুধু একটি নির্দিষ্ট কবরফলক
দেখতে পায়। সেই কবরটা হলো এমা ফ্লরেন্স নামক এক মহিলার। আজব ব্যাপার হলো,
দ্বিতীয় বার কেউ যখন ভালো করে সেই কবরস্থানের ভেতরে তাকায় তখন সে হাজার
খুঁজেও সেই এমা ফ্লরেন্সের কবরটি দেখতে পায় না। এই ব্যাপারটি মেলবোর্নের
বহুলোকের বেলায় ঘটেছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউন থেকে ১৬৪১ সালে ক্যাপ্টেন হেনড্রিক ভ্যান ডার
ডেকেন তার জাহাজ নিয়ে বের হন। তার ইচ্ছা ছিল সমগ্র বিশ্বভ্রমণ করে আবারও
তার প্রিয় দেশে প্রত্যাবর্তন করা। কিন্তু তার জাহাজ আর কোনো দিন ফেরেনি,
ভয়াল সমুদ্র হয়তো তা গ্রাস করেছে। আজও নাকি গভীর সমুদ্রে একটি নাবিক শূন্য
ভুতুড়ে জাহাজের দেখা মেলে। লোকে এর নাম দিয়েছে দ্য ফ্লাইং ডাচম্যান।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপ্টেন রিন্ডসে হাউস মূলত এন্টিক সংগ্রহশালা। অনেকেই
বলেন, এখানে নাকি পরমাত্দারা প্রায়ই বিচরণ করে। প্রচলিত গল্পগুলোর মধ্যে
একটি হলো_ হঠাৎ পাশের ঘরে একটি শব্দ হলো, দর্শক পাশের ঘরে গিয়ে দেখল যে,
সবকিছুই যথাযথ স্থানে সাজানো আছে। অতঃপর তারা আগের ঘরে ফিরে এসে দেখল
বিছানার চাদরে পাঁচ আঙ্গুলের হাতের ছাপ!
ম্যাসাচুসেটসের ৪৪ নম্বর রুটের লাল চুলো আগন্তুক এক কুখ্যাত ভূত।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা মতে, চলমান গাড়ি থেকে রাস্তার মাঝখানে হন্টনরত
একটি লোককে নাকি প্রায়ই দেখা যায়। পরনে জিন্সের প্যান্ট, লাল ফ্লানেলের
শার্ট, দাড়ি এবং চুল লাল রঙের এই ভদ্রলোক নাকি এই রাস্তাতেই অনেক দিন আগে
সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন।
ভয়াবহ বাড়ি
১৭০৪ সালের জানুয়ারির এক সকাল। মি. ওয়ানিকুর ও তার পরিবার পাশের মাঠে কাজ
করছিলেন। তখন ভেনেজুয়েলাজুড়ে দাঙ্গা চলছিল। ওয়ানিকুরের বাড়িতে হামলা চালায়
একদল দাঙ্গাকারী। ঘরের সব মালামাল লুটপাট করে। মাঠের মধ্যে খুন করে
ওয়ানিকুরের স্ত্রীকে। এর পর বাপের চোখের সামনে ১৪ জন পুরুষ মিলে ধর্ষণ করে
একমাত্র মেয়েটিকে। সইতে না পেরে ওয়ানিকুর দড়ির বাঁধন ছিঁড়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন
শত্রুর ওপর। এই ফাঁকে তার দুই যমজ ছেলেকে গুলি করে মারে দাঙ্গাকারীরা।
ওয়ানিকুরকে অজ্ঞান করে ফাঁসি দেওয়া হয়। পরে এই বাড়িটিতে বাস করতে আসে এক
গরিব দম্পতি এবং তাদের পাঁচ বছরের একটি শিশু মেয়ে। বাড়িতে ঢোকার দিন থেকেই
তারা লক্ষ্য করতে থাকেন, রাত নামলেই বাড়িটিতে কাদের যেন উপস্থিতি টের পাওয়া
যায়। প্রায়ই ঘরের টিনের চালে রাতের বেলা ধস্তাধস্তির আওয়াজ হয়। তার পরও
সেই পরিবার বাড়িটি ছেড়ে যায়নি। পরিণাম হয় খুব ভয়াবহ। বাড়ির পাশে একদিন
তাদের বাচ্চা মেয়েটাকে পাওয়া যায়। শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন। পাশেই পড়ে আছে
একটি মেয়ের ছবি। ছবির সেই মেয়েটি ওয়ানিকুরের ১৪ বছরের মেয়েটি, যাকে ধর্ষণ
করে হত্যা করা হয়েছিল তাদের বাড়ির সামনেই।
রণক ইকরাম