ভূত-পেত্নী

Saturday, December 26, 2009

ভূত-পেত্নী পরিচিতি

ভূত হলো অশরীরি পুরুষ আত্মা, আর পেত্নী (মহিলা ভুত) অশরীরি মেয়ে আত্মা। অপঘাত, আত্মহত্যা প্রভৃতি কারণে মৃত্যুর পর মানুষের অতৃপ্ত আত্মা ভূত-পেত্নী হয়ে পৃথিবীতে বিচরণ করতে পারে।
ভূত কোথায় থাকে:
শেওড়া, তাল, দেবদারু, বেল, অশ্বত্থ প্রভৃতি গাছে একটি দুটি ভূতের দেখা পেতে পারেন। কিন্তু বেশি সংখ্যায় ভূত দর্শনের অভিলাষ থাকলে, আপনাকে যেতে হবে বিজন বনে, তেপান্তরে, কিংবা ভূষণ্ডির মাঠে।
ভূতের গল্পের বর্ণনা মাধ্যম:
ভূতের গল্প উত্তম পুরুষে, অর্থাৎ নিজের জবানিতে বলাই ভালো, তাতে গল্পে অনুভূতির ব্যঞ্জনা তীব্র হয় এবং গা ছমছম ভাবটা প্রকট করা যায়। ভূতের গল্পে স্বভাবতই কাউকে না কাউকে ভূতের পাল্লায় পড়তে হবে, সেটি বর্ণনাকারী নিজেই হতে পারেন।

ভূতের গল্প একটানে বলতে নেই, কিছুটা ভয়ের জায়গায় এসে গল্প থামিয়ে দিয়ে সময় ক্ষেপণ করতে হবে, যাতে অন্যরা অনুরোধ করে গল্প চালিয়ে যেতে। যেমন বলা যায়, "বিজন জঙ্গলে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ এক জায়গায় দেখলাম কী..! আচ্ছা, আজ থাক, ঘুম পাচ্ছে, বাকিটা আরেক দিন বলব।"
কিন্তু গল্পের যে অংশগুলি বেশি ভয়ের, বিশেষ করে চূড়ান্ত অংশ, সেখানে না থেমে খুব দ্রুত, জোরে জোরে হঠাৎ বলে ফেলতে হবে। যেমন: "...একথা শুনে লোকটা বলল, আচ্ছা, দেখেন তো এরকম কিনা [নরম স্বরে বলতে হবে] ঘুরতেই দেখি, লোকটার পায়ের কাপড় একটু উপরে, পায়ের পাতা উল্টানো [একটু জোরে], পায়ের আঙ্গুলে কোনো ফাঁক নেই [আরো জোরে], একদম হাঁসের পায়ের মত দেখতে [আরো জোরে বলতে হবে এবং এই দেখো, বলে হঠাৎ গল্পকার নিজের পা দেখিয়ে দেবেন]
ভূতের গল্প বলার উপযুক্ত সময়:
কেউ অনুরোধ করলেই সাথে সাথে ভূতের গল্প বলতে বসে যাবেন না যেন। সব কিছুরই একটা তরিকা আছে। ভূতের গল্প বলতে হয় মজলিসে, আর গল্পের উপযুক্ত সময় হচ্ছে রাতের বেলা, বিশেষ করে বাদল ধারার রাতে। ঝমঝম বৃষ্টির ফোঁটা পড়বে টিনের চালে বা ছাদে, জানালা থাকবে হাট করে খোলা, হালকা বৃষ্টির ছাঁট আসবে ঘরে। তীব্র কোনো আলো রাখা চলবে না, কেবল একটু দূরে হারিকেন, কুপি বা মোমের মৃদু আলো মিটমিট করে জ্বলতে পারে।
প্রেম-ভালবাসায় ভূত-পেত্নী:
ভূত-পেত্নীর শারীরিক সৌন্দর্যের ব্যাপারে নানা মত চালু থাকলেও, প্রেম-ভালবাসায় তাদের নিষ্ঠা ও বিশ্বস্ততা বেশ সুবিদিত। তাই যুগ যুগ ধরে মানব প্রেমিক প্রেমিকা গভীর ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে পরস্পরকে পেত্নী, ভূত নামে আখ্যায়িত করে থাকে।

ভূত-পেত্নী দশার অবসান:
ভূত-পেত্নী অতৃপ্ত আত্মা, পৃথিবীর মায়ায় ইত:স্তত ছুটে বেড়ায়। তাদের জীবন ক্লান্তিকর ভারবহ উদ্দেশ্যহীন, তাই কেউ ভূত-পেত্নীর আত্মা মুক্ত করলে তারা খুশি হয়। আত্মা মুক্ত করার একটি কার্যকর উপায় হলো গয়ায় গিয়ে ভূতের নামে পিণ্ডি দেয়া।

0 comments: