ভূত আসলে কী?

Monday, November 26, 2012

প্রচলিত অর্থে ভূত মানে আত্দা বা অপচ্ছায়া। এর অস্তিত্ব শতভাগ প্রমাণিত না হলেও বিশ্বজুড়ে যুগের পর যুগ মানুষ ভূতে বিশ্বাস করে আসছে। সেই বিশ্বাস অনুসারে ভূত হলো মৃত ব্যক্তির আত্দা যা জীবিত ব্যক্তিদের সামনে দৃশ্যমান বা অন্য কোনো অলৌকিক উপায়ে নিজের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে সক্ষম। পৃথিবীর অনেক প্রাচীন লোককাহিনী ও লোকগাথায় যেমন ভূতের অস্তিত্ব রয়েছে, ঠিক তেমনি আধুনিক বিশ্বের মানুষের মুখেও প্রায়ই ভূতের গল্প শোনা যায়। এসব গল্পে ভূতকে নানাভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এ বর্ণনায় কখনো অদৃশ্য, কখনো অস্বচ্ছ বায়বীয় কখনো কখনো অদ্ভুতুড়ে প্রাণী আবার কখনো বাস্তবসম্মত সপ্রাণ মানুষ বা জীবের আকারে ভূতকে তুলে ধরা হয়েছে। পৃথিবীর অনেক জাতিই ভূতে বিশ্বাস করে। তাদের মতে, প্রাণীর শরীর থেকে আত্দা চলে গেলেই সে প্রাণহীন হয়ে যায়। কোনো কোনো আত্দা প্রাণীর শরীর থেকে বের হওয়ার পরও ফিরে আসে। আর এই ফিরে আসা আত্দাই হচ্ছে ভূত। কোনো শরীরী রূপ তার থাকে না। সে থাকে অস্পষ্ট। কিন্তু তার চালচলন স্বাভাবিক জীবিত শরীরের মতো। তাকে স্পষ্ট দেখা যায় না। তবে উপলব্ধি করা যায়।

প্রাক-শিক্ষিত সংস্কৃতিগুলোর সর্বপ্রাণবাদ ও পূর্বপুরুষ পূজার মধ্যে ভূতের প্রথম বিবরণ পাওয়া যায়। সেই যুগে কিছু নির্দিষ্ট ধর্মীয় প্রথা, অন্ত্যেষ্টি সংস্কার, জাদু ও ভূত তাড়ানো অনুষ্ঠানের আয়োজন হতো মৃতের আত্দাকে তুষ্ট করার জন্য। প্রচলিত বর্ণনা অনুযায়ী, ভূত একা থাকে, তারা নির্দিষ্ট কিছু স্থানে ঘুরে বেড়ায়, জীবদ্দশায় যেসব বস্তু বা ব্যক্তির সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ছিল সেগুলোকে তাড়া করে ফেরে। তবে ভূতবাহিনী, ভৌতিক ট্রেন, ভৌতিক জাহাজ এমনকি ভৌতিক জীবজন্তুর কথাও শোনা যায়।

বৈজ্ঞানিক যুক্তি

ভূতে বিশ্বাস আছে কি না_ এ রকম প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়নি পৃথিবীতে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। পৃথিবীর অনেক দেশেই জরিপ করা হয়েছে সে দেশের মানুষ বা শিশুরা ভূতে বিশ্বাস করে কি না? আর সেই জরিপে দেখা গেছে, অশিক্ষিত ও পিছিয়ে পড়া মানুষ তো বটেই, শিক্ষিত ও সচেতন মানুষও চরমভাবে ভূতে বিশ্বাসী। ২০০৫ সালে আমেরিকার গ্যালপ অর্গানাইজেশন আমেরিকানদের ওপর একটি জরিপ চালায়। জরিপে দেখা যায়, শতকরা ৫২ ভাগ আমেরিকান ভূতে বিশ্বাস করে। ছোটরা তো বটেই, বড়রাও ভূতে বিশ্বাস করে। ভূতের ওপর বিশ্বাস নিয়ে বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা রয়েছে। সে অনুসারে মানুষ সাধারণত অবাস্তব কাহিনীর জন্ম দেয় তার কল্পনাশক্তির ওপর ভর করে। ভূতেরা জন্মের আদিলগ্ন থেকেই আছে; কিন্তু বিজ্ঞানের কাছে এর ব্যাখ্যা নেই। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিকারিরা ভূত শিকার করে চলেছেন। তারা ছবি, ভিডিও এবং ভূতের কথা বলে বেড়াচ্ছেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ভুয়া ভূত শিকারিরা একই প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষকে বোকা বানাচ্ছেন। তাই ভূতের অস্তিত্ব মানেই ভুয়া কথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যারা বিজ্ঞানের লোক তারা অবিশ্বাসের সঙ্গে সব যুক্তি নাকচ করেন। বৈজ্ঞানিক যুক্তি অনুসারে শক্তি বিভিন্নভাবে থাকতে পারে। যেমন_ তাপ, আলো, রাসায়নিক ও বৈদ্যুতিক শক্তি। শক্তি যে কোনো পরিবর্তন আনতে পারে। থার্মোডিনামিঙ্ েআলোচনার বিষয় এই শক্তি। আর শক্তির বিষয়ে থার্মোডিনামিঙ্রে দুটি বিখ্যাত সূত্র রয়েছে। সেই সূত্র যদি বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করা যায় তাহলে প্রমাণ করা সম্ভব ভূত আছে। যদি এটিকে প্রমাণ হিসেবে ধরে নেওয়া যায়, তার পরও মনে কিছু প্রশ্ন থেকেই যাবে। এ প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করলেই কিছু না কিছু খুঁজে পাওয়া যাবে। থার্মোডিনামিঙ্রে প্রথম সূত্র থেকে জানি শক্তির কোনো বিনাশ নেই, শুধু এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় যায়। তাহলে, আমরা যদি শক্তি হই তবে মৃত্যুর সঙ্গে আমরা বিনাশ হব না, শুধু রূপ পরিবর্তন হবে। আমাদের শরীর বিশ্লিষ্ট হয় মাইক্রো-অর্গানিজম দ্বারা এবং এভাবে মানুষের শক্তির রূপ পরিবর্তিত হয়। এখানে প্রশ্ন থেকে যায়, তাহলে আমাদের বুদ্ধিমত্তার কী হয়? কেননা আমরা আমাদের বুদ্ধিমত্তার বদৌলতেই একটি পরিচয় বহন করি। আমাদের মন কি হাওয়ায় উড়ে যায়? নাকি শুধুই জীবাণুর খাদ্য? এই পরিবর্তন কি মেনে নেওয়া যায়? বিজ্ঞানের চোখ কি বলবে, আমাদের বাইরেও অনেক প্রাণ আছে?

0 comments: